প্রেমময় প্রেম

এ কেমন প্রেম (আগষ্ট ২০১৬)

শাহ আজিজ
আমায় যখন পৃথিবী নামক ভূখণ্ডে স্লো মোশনে ল্যান্ড করানো হয় , মনে হল শক্ত কিছু পায়ের নিচে ঠেকছে । কালো কুচকুচে আঁধারে হতভম্ব আমি , বিব্রত এবং ভীত ! অনেকক্ষণ বাদে আমি আকাশ ও তারকারাজির দিকে তাকালাম। বেশ লাগলো । এরপর চারপাশ দেখতে চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘন অন্ধকারে সব একাকার। সাবধানে বসে পড়লাম । কাত হয়ে শুয়ে মনে হল আমি উচু কোন জায়গায় নেমেছি। আমি কিছু একটা গর্জন শুনতে পাচ্ছি কিন্তু তা কিসের বলতে পারব না। কারন এরকম গর্জন স্বর্গে নেই। মৃদু মধুর ঠাণ্ডা হাওয়ায় শরীর শীতল হতে শুরু করল।
একদম বিবস্ত্র হয়ে হাওয়াকে নিয়ে স্বর্গ ত্যাগ । হ্যা হাওয়া , আমার অকাবিনকৃত সঙ্গিনী, এখন কোথায় ? আমি ভাবলাম চিৎকার করে ডাকি , ডাকলাম ।
আমার ডাক প্রতিধ্বনিত হল ।
থাক হাওয়াকে আর ডাকার দরকার নেই। কোথায় ল্যান্ড করেছে কে জানে? এখন এই আঁধারে আমায় হয়ত দুম্বার কম্বল আর বার্গার খুজতে পাঠাবে।HAOA HAOA হাওয়ার জন্যই তো এতো ঝামেলা ! আমায় পটিয়ে আপেল খাওয়ালো আর দৈববাণী ঘোষিত হলো পাপের সাজা ভোগ করো পৃথিবী নামক গ্রহে গিয়ে।
আমারতো এই মধুর শীতল হাওয়া ভালোই লাগছে।
স্বর্গের পাশে নরক হওয়াতে স্বর্গের একদিক গরম থাকে । পাপ না করেও কিঞ্চিৎ সাজা ভোগ করা লাগে ।
শক্ত পাথর সম্ভবত তার ওপর লতাপাতার অস্তিত্ব টের পেলাম। তারপর ভীষণ ক্লান্ত আমি শুয়ে পড়লাম । চোখ লেগে এসেছিল কিন্তু কিছু একটা অস্বাভাবিক ঘটনায় উঠে পড়লাম । একদিক দিয়ে রুপালী কিছু একটা স্বল্প আলো ছড়িয়ে ধীরে উপরে উঠছে। স্বর্গের আশেপাশে এরকম ব্যাপার নেই। উত্তেজনা কেটে গেলে বেশ ভালই লাগলো এই অজানা বস্তুকে। আবার শুয়ে পড়লাম এবং ঘুমিয়ে গেলাম।

কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে বুঝলাম এগুলো পাখি তবে স্বর্গের ফিনিক্স নেই এখানে। আমি একটি পর্বতের উপর বসে । আমার দুদিক দিয়ে নিচে নেমে গেছে। রাতের অজানা গর্জন হলো সীমানাহীন লেকের পানি । এতো বড় লেক হয়? আলোকিত করে একটি লালচে বলয় উঠছে একদিক হতে লাল টকটকে আগুনের আভা নিয়ে । বুঝলাম এটা আলোদাতা বলয় , স্বর্গে কয়েকটা আছে। এবার উঠে সামনের ঘন সবুজ গাছপালার দিকে এগুলাম ।
খুব ক্ষুধার্ত আমি।
গাছপালার ভেতর বেশ কিছু অজানা ফল দেখলাম , লাল এবং হলুদ রঙের । একটা পাড়লাম বেশ সন্ধিগ্ন দৃষ্টি নিয়ে। শুঁকে সুগন্ধ নাকে এলো, এটা পাকা টসটসে। সন্তর্পণে ওটার খোসা তুললাম এবং সামান্য পরিমান জিহবায় লাগিয়ে বুঝলাম এটা খাওয়ার উপযুক্ত। পেট পুরে খেলাম, তৃপ্তি ক্ষুধা সব মিটে গেল । এবার জঙ্গল ছেড়ে সোজা সামনের খোলা জায়গায় বেরুতেই অবাক হয়ে দেখলাম অদ্ভুত চারপেয়ে একটা জীব দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। তার মাথার দুদিকে একটা করে শিং আছে। স্বর্গের হরিনের মত অনেক শিংযুক্ত নয়। তার মুখটা মোটেও হিংস্র মনে হচ্ছেনা। আমি খুব সতর্ক থাকছি এজন্য যে এই অজানা গ্রহে কোন হিংস্র পশুর হাতে না পড়ি । এই পশুটির গায়ের রঙ সাদা আর বাদামি রঙে মেশানো । তার চোখদুটো বড্ড মায়াময় ।

আমি ওকে একদিকে রেখে খুব সতর্ক পায়ে এগুতেই সেও ঘুরে দাঁড়াল এবং আমার সমান্তরালে হাঁটতে লাগলো।
আমি কি বিপদ সাথে নিয়ে হাঁটছি ??
আমি দাড়িয়ে তাকে আঙ্গুল দিয়ে নির্দেশ করলাম ওই দিকে যাও, এবং আমার পিছু নিওনা। সে গলা উচিয়ে হাম্বা শব্দে আওয়াজ তুলল । ভড়কে গেলেও সতর্ক রইলাম এবং বুঝলাম পশুটি বিপজ্জনক নয় । এক পা দু পা করে ওর কাছে গেলাম তারপর নিরাপদ দূরত্বে থেকে ওর মাথায় হাত দিলাম । মাথাটা নামিয়ে বেশ অধীনস্থ ভাব প্রকাশ করল। আরেকটু এগিয়ে যেতেই গলা উচিয়ে আমার কাধে রেখে সংহতি প্রকাশ করল। আমার শরীরের ভেতর যে শক্ত ভাব ছিল তা কেটে গেল । আক্রমণকারী পশু এমন হয়না। স্বর্গের দুম্বাদের যেভাবে গলায় হাত বোলাতাম ওকেও সেভাবে বোলালাম । আমাদের সমঝোতা হয়ে গেল মনে হচ্ছে। এবার লক্ষ্য করলাম তার পেটের নিচে দুধের বাট এবং স্তন বেশ ফোলা । আমরা এগুচ্ছি গায়ে গা মিশিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে। সন্দেহ জাগল আরো মানুষ কি আছে এই গ্রহে , নাহলে ও আমায় এতো নিরাপদ ভাবছে কেন? কেনইবা এতো ঘনিষ্ঠ আচরন !
বেশ পথ হাঁটলাম , লেকটি আর দেখা যাচ্ছেনা। আমার শরীরে এই প্রথম বিন্দু বিন্দু পানি বেরুচ্ছে। ফল খেয়ে হলনাতো ? খুব উচু গাছের ছায়ায় এলাম আলোর বলয় ছেড়ে । ছায়া আর মৃদুমন্দ বাতাসে পায়ের নিচে শুকনো পাতায় ভরা জমিনে শুয়ে পড়লাম । প্রাণীটি দাড়িয়ে। এবার চেষ্টা করা যাক ওর দুধের বাটে মুখ লাগানো যায় কিনা। গড়িয়ে কাছে গেলাম এবং পায়ের অবস্থান খেয়াল করে খুব সাহস নিয়ে দুই কেনোয় ভর করে চিৎ থেকেই বাটে মুখ লাগালাম । নাহ ওর কোন প্রতিক্রিয়া নেই । আমি প্রান ভরে দুধ খেলাম এবং ওখানেই চিত হয়ে রইলাম অতি আরামে ।আমি বাট ছাড়তেই অতি বুদ্ধিমান এই প্রাণী কায়দা করে সরে কাছের সবুজ চিকন পাতা খেতে শুরু করল । ক্লান্ত আমি দ্রুত ঘুমিয়ে গেলাম।
চোখ খুলে সবুজ পাতার ছায়া ঘেরা দৃশ্যে চমকিত আমি ! আমি কোথায় , ওহ , মনে পড়ল আমি স্বর্গ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পৃথিবী নামের ভূখণ্ডে পতিত। বা দিকে তাকিয়ে দেখি প্রাণীটি কাৎ হয়ে শুয়ে কিছু একটা চাবাচ্ছে। এবার ডানে তাকালাম এবং ভীষণ চমকে দেখি চার পাচ কুড়ি এই একই প্রাণী, ছোট বড় ঠায় দাড়িয়ে । মাথার মধ্যে ঘুরছে কি করা উচিত । এরা যে আমায় আক্রমণ করতে এসেছে মনে হচ্ছেনা , বিশ্বাস নেই , সামনের লম্বা গাছটির দিকে তাকিয়ে বেয়ে ওঠার একটা সিদ্ধান্ত মাথায় রেখে আস্তে ধীরে উঠে পড়লাম দারুন টেনশন নিয়ে। আমার প্রাণীটিও উঠে পড়েছে এবং আমার গা ঘেষে দাঁড়াল, মনে সাহস এলো ।
প্রাণীটির গলায় মালিশ দিতে থাকলাম আর নজর রয়েছে ওই বিশাল দলের দিকে । বেশ কিছুক্ষন এই নজরদারি পরীক্ষা চলল। ওদের মধ্যে কোন আক্রমণাত্মক ভাব নেই। আমি ওকে পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে আমাদের যাত্রা পথে এক দু পা করে এগুলাম। নজর পিছনে এবং সামনে যুগপৎ। ওরাও নড়েচড়ে যাত্রা শুরু করল , এখন?
যাক দেখা যাকনা , বিপদ এলে বড় গাছগুলো সহায়।
বেশ খানিক হাঁটলাম এবং ভয় দূর হল ধীরে ধীরে । আমার সাথের প্রাণীটি আমায় পছন্দ করেছে এবং আমিও তার সাথে এই সবুজ বৃক্ষরাজিকে স্বর্গীয় প্রেমে আবদ্ধ করে নিয়েছি। ভাগ্যিস হাওয়া বেগম সাথে নেই, কোথায় পড়েছে জানা নেই ।
আমায় যদি এখন ঈশ্বর আদেশ করেন ‘স্বর্গে এসো’ ! আমি চিৎকার করে বলব এই প্রেমময় আখ্যান থেকে বঞ্চিত করোনা আমায় প্রভু।
সামনেই ছোট লেক , পাহাড় দিয়ে ঘেরা, টলটলে পানি কি পরিস্কার!
ঢাল দিয়ে নেমে গেলাম সবাই। এবার পানিপানের পালা। আমি আজলা ভরে পানি পান করলাম , পৃথিবীর প্রথম পানি স্বর্গের চেয়েও উত্তম । বাকি দল লাইন দিয়ে মৃদু আওয়াজ তুলে পানি পানে ব্যাস্ত । আমরা অনেক হেঁটেছি। কুউ- উ শব্দ করে কোন পাখি গাছের আড়াল থেকে ডেকে উঠল। কি চমৎকার , কি নাম এই পাখীর? কেমন দেখতে? আবারো ডাকল এবং আমার সন্দিঘ্ন দৃষ্টি ঘুরতে লাগলো পাতা থেকে পাতাতে কিন্তু তার অস্তিত্ব পেলাম না। বড্ড একাকী আমি এবং একাই বুঝে নিতে হবে সব।
আমি হাওয়ার কথা ভুলে গেলাম এবং প্রাণীকুল , বৃক্ষদল ও কু -উ সঙ্গীতের প্রেমে আবদ্ধ হয়ে সামনের সমতলের দিকে পা বাড়ালাম ।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী জাহাঙ্গীর হাওয়া ...দরকার নেই...।এটা বাস্তবতা মেনে না নেওয়ার সহজাত পুরুষ প্রবৃত্তি,হাওয়াদের প্রেম এখানে স্বিকৃতি পায়নি, যদিও হাওয়ার পূনর্মীলনেই পৃথীবি আবাদ হয়েছে, এটা একধরনের পৌরুষিক স্বার্থপরতা বৈকি। কল্পনা শক্তিকে সাধুবাদ,শুভ কামনা
গোটা গল্পের বিষয়টাই এক ধরনের প্রতীকী নির্ভরশীল । গল্প অসমাপ্ত রেখেই শেষ করেছি। পাঠক ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এর ব্যাপ্তি ঘটাক। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
জসিম উদ্দিন আহমেদ ভিন্ন রকম একটি গল্প। ‍"থাক হাওয়াকে আর ডাকার দরকার নেই। কোথায় ল্যান্ড করেছে কে জানে? এখন এই আঁধারে আমায় হয়ত দুম্বার কম্বল আর বার্গার খুজতে পাঠাবে"-লাইনগুলি ভাল লেগেছে। কয়েকটি লাইনে মেয়েদের মেয়েলিপনার স্বরূপ বেশ ফুটে উঠেছে।
জায়গামত পাকড়াও করেছ। এটি রুপক ধর্মী রচনা তাই যারা ফ্রেজ ওয়ার্ডের সাথে পরিচিত নয় তাদের ভাল লাগবেনা। ধন্যবাদ জসীম।
ইমরানুল হক বেলাল chomotkar golpo, pore mugdo holam, priyo Dada aponar lekhar hat onek sokktisali, duya kori, ei darabahikota jeno sob somoy take.
তবে তাই হোক -------------------
প্রান্ত স্বপ্নিল দাদা, বেশ লাগলো
ধন্যবাদ প্রান্ত স্বপ্নিল ।
ফেরদৌস আলম খুব মজা পাইছি আজিজ ভাই, দারুণ হয়েছে।
এটা পড়ে সবাই মজা পাবেনা কারন প্রতীকী ব্যাবহার করে লেখা অনেকেই মেনে নিতে চাইবেনা , এজন্য গল্পের ভিকটিম আমি নিজেই।
কবির সিদ্দিকী অতি অসাধারণ একটি গল্প। ধন্যবাদ লেখককে এত সুন্দর লেখা উপহার দেওয়ার জন্য। আপনার প্রোপ্রাইলে জন্মসালটা ভুল আছে। আশাকরি সংশোধন করবেন।
ধন্যবাদ কবির সিদ্দিকী ।
আহা রুবন কোথায় হাওয়াকে ভুলে গেলেন? এতক্ষণ যে প্রাণিটির সাথে ছিলেন ওটাই তো হাওয়া।... ভাল লাগল গল্পটি। বর্তমান এই জঙ্গির উৎপাতের সময় এমন পৃথিবীকে ভালবাসার গল্প দারুনভাবে আলোরিত করল।
এখনকার হাউকাউ হাওয়া থেকে মাফ চাই । আপেল খাইয়ে অবশ্য ভাল করেছে । গরু হচ্ছে সেই প্রাণী যা মানুষের কাছ ছাড়া চলতে পারেনা। এসব প্রতীকী গল্প।
sobuj gazi স্বর্গে কোন নরগের বাতাস পায় না , তারাই পায় জাদের পুণ্যের ঘাটতি রয়েছে ।
তাইত স্বর্গ খালি , হা হা হা

০৮ মে - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৮১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪